Uttara, Dhaka, Bangladesh
+8801707386530
mail@zcl.com.bd
অনেক দেশেই মাটির নিচে সোনার খনি আছে। আছে হিরার খনি। কিন্তু অনেক দেশের খনি থেকে সোনা বা ডায়মন্ড উত্তোলনের ক্ষমতা না থাকায় ঐ সম্পদ তারা কোন কাজে লাগাতে পারে না, মাটির নিচেই থেকে যায়। যেমন বার্মা, দক্ষিন আমেরিকা বা আফ্রিকার কংগো সহ বহু দেশ। কিন্তু আমাদের সারা দেশের মাটির উপরেই আছে সোনার খনি, কিন্তু আমরা সে সোনা দেখতে পারছি না বলে কোন কাজে লাগাতে পারছি না।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের মোট রপ্তানী আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, অথচ ২০১৬ সালে ভিয়েতনাম শুধুমাত্র কৃষিজাত পন্য রপ্তানী করেছে ৩২ বিলিয়ন ডলারের। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মোট রপ্তানী আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার এর চেয়েও কম, আর ভিয়েতনাম শুধুমাত্র কৃষিজাত পন্য রপ্তানী করে আয় করেছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। যে সমস্ত কৃষিজাত পন্য ভিয়েতনাম রপ্তানী করেছে তার মধ্যে আছে wood & timber, seafood ছাড়াও অন্যান্য কৃষিজাত ফসল। এই সব ফসলের মধ্যে আছে কফি, কাজু বাদাম, গোলমরিচ, চাল, রাবার ইত্যাদি। ভিয়েতনাম এগুলো থেকে প্রতিবছর আয় করছে ২৪/২৬ বিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনাম যে সমস্ত কৃষিজাত পন্য রপ্তানী করেছে, তার সবই বাংলাদেশে খুব সহজে উৎপাদন করা যাবে। আর এসব পন্যের চাহিদা আমাদের দেশে ও বিদেশে প্রচুর, বলা যেতে পারে সীমাহীন। বিশ্বের বহু দেশই বৈরি আবহাওয়া, অতিরিক্ত শীত, অতিরিক্ত গরম বা পাহাড় পর্বত এর কারনে কোন ফসল সহজে চাষ করতে পারেনা। এই যেমন জাপান বাংলাদেশের তুলনায় ২.৫ গুন বড়, কিন্ত তাদের মোট জমির মাত্র ১০% চাষযোগ্য আর বাকি ৯০% পাহাড়, উপরন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় শীত থাকে। ভারত আমাদের তুলনায় অনেকগুন বড় হলেও তার বহু রাজ্যে অতিরিক্ত গরম, পাহাড়, অনুর্বর জমি বা কম বৃষ্টির কারনে ফসল ফলানো খুব কঠিন। বহু দেশের ক্ষেত্রে এই একই সমস্যা রয়েছে। রাশিয়া এত বড় দেশ হলেও ঠান্ডার কারনে ফসল ফলাতে পারে না। চীন বড় দেশ হলেও মরুভুমি, ঠান্ডা, পাহাড়ের কারনে অনেক জমিতে চাষ করতে পারেনা।
কিন্তু আমাদের পুরো দেশটিই উর্বর ও সমতল আর সারা দেশেই যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়। আমাদের সব থেকে বড় সুবিধা হলো বছরজুড়ে ফসল ফলানোর জন্য সুবিধাজনক তাপমাত্রা। এ দেশে কত ফসল সহজে চাষ করা যাবে তার শেষ নেই। এদেশে কোন ফসলটি হবেনা সেটাই বরং বলা কঠিন। আমাদের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ বা Subtropical. এর কারনে এদেশে Tropical & Subtropical অর্থাৎ গরম বা হালকা শীতের সব ফসলই সহজে চাষ করা যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোন ফসল আমরা চাষ করব?
ধান হয় বলে কি শুধুই ধান চাষ করব? আর তিনবেলা ভাত খাব? ধান হচ্ছে সব থেকে সস্তা ফসল, চাষ করার খরচ ও ঝামেলা দুটিই বেশি। যা আয় হয় তার চার ভাগের তিন ভাগই খরচ হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত ভাত খাওয়া স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
এখন ধান বা অন্য সস্তা ফসলের বিকল্প ফসল আছে অসংখ্য, দেশে ও বিদেশে যার চাহিদার শেষ নেই। এরকম কিছু ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হচ্ছে ড্রাগন, কাঁচা খাবার উপযোগী খেজুর (Barhee date palm), কফি, Avocado, গোল মরিচ, হাইব্রীড নারিকেল, কাজু বাদাম, মিস্টি ভুট্টা, Industrial pineapple. এসব ফসল আমাদের দেশের সর্বত্র চাষ করা যাবে। ড্রাগন, খেজুর, Avocado, হাইব্রীড নারিকেল সারা দেশের সব উঁচু জমিতে চাষ করা যাবে। বর্তমানে চা হচ্ছে এমন সব জমিতে, যেমন চট্টগ্রাম, সিলেট, ঠাকুরগাঁ , পঞ্চগড়, ভাওয়ালেরগড় সহ বহু এলাকাতে কাজুবাদাম, কফি, গোলমরিচ, এলাচ চাষ করা যাবে।
বর্তমানে বছরে গড়ে ৩ কোটি একর জমিতে আমরা ১/২ বার ধান চাষ করে বছরে ৩.৫ কোটি টন চাল উৎপন্ন করে সব খেয়ে ফেলে ভুল করছি। বরং ২০-৩০ বা ৪০% উঁচু জমিতে এই সব দামী ফসল চাষ করে লাখ লাখ লোক নিজেদের ভাগ্যের সাথে সাথে দেশের ভাগ্য সহজেই বদলে ফেলতে পারে। আমরা এখন দেখি কোন ফসল চাষ করে কতদিনে কত টাকা আয় করা যাবে।
ড্রাগন চাষ করলে প্রতি একরে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা, ২য় বছরে ৪ লাখ, ৩য় বছরে ৭/৮ লাখ, ৪র্থ বছরে ১০/১২ লাখ আয় হবে আর চলবে ২৫-৩০ বছর ধরে। ফলন হয় একরে ৬/৭ টন, দাম পাইকারী ১৫০-২০০ টাকা গড়ে।
বারহী খেজুর চাষে একরে খরচ হবে ৫-৬ লাখ টাকা, ৪র্থ বছর ৫/৬ লাখ টাকা, ৭/৮ বছর থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় হবে প্রতি একরে। ফলন চলবে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। এই খেজুর প্রক্রিয়াজাত করে রেখে পরে কাঁচাই বিক্রি করা যায়।
গোল মরিচ বা Avocado চাষে শুধু একবারই বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। এরপর শুধু পরিচর্যা খরচ। Avocado সারা বিশ্বের সব ধনীদেশে প্রচুর চাহিদা। কিন্তু অইসব দেশ ঠান্ডা ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে Avocado চাষ করতে পারে না। বিশ্বে এর লাখ লাখ টনের চাহিদা। আমাদের দেশে প্রতি একরে ৪/৫ টন Avocado এর ফলন হবে, যা থেকে অনায়াসে একরে ৭-১০ লাখ টাকার বেশি আয় হবে। গোলমরিচ চাষে আয় হবে একরে ৮-১০ লাখ টাকা।
ভিয়েতনাম ১৯৮৬ সালে ১৮০০০ টন কফি রপ্তানী করেছিল আর তারা ২০১৬ সালে ১০০ গুন বেশি প্রায় ১৮ লাখ টন কফি রপ্তানী করে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এদেশের বহুস্থানে খুব সহজে রোবাস্টা কফি চাষ করে বাংলাদেশ বিশ্বে বড় কফি রপ্তানীকারি দেশ হতে পারে।
এভাবে আমরা সারা দেশে কাজুবাদাম, শিল্পে ব্যবহৃত আনারস MD2, মিস্টি ভুট্টা সহ অসংখ্য দামী ফসল চাষ করে রপ্তানীর মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার সহজেই আয় করতে পারি। Protected Culture নামে পরিচিত গ্রীনহাউজের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, চেরিটমেটো, মেলন সহ সৌন্দর্য্যবর্ধক ফুল চাষ করা যাবে সারা দেশে। যার ফলে প্রমাণ হবে এদেশের মাটির উপরে সত্যিই সোনার খনি!!!
Facebook Page | Privacy Policy | © Zishan Corporation Ltd | Developed by House of Innovation |