Uttara, Dhaka, Bangladesh

+8801707386530

mail@zcl.com.bd

চীনের মহাপ্রাচীর আর বাংলাদেশের মহাবেড়া। The great wall of China and the great “প্রাচির বা বেড়া /walls of Bangladesh.


চীনের দক্ষিনের যাযাবরদের হাত হতে উত্তরের লোকেদের রক্ষা করার জন্য প্রথম ৭৭১ সাল খ্রীস্টপুর্বাব্দে শুরু হয়ে প্রায় ৩০০ বছর ধরে এর কাজ চলে প্রথম ধাপে। পরে পরে Qin Dynasty ২২০ সালে শুরু করে ২০৬ সালে এর কাজ শেষ করে। পরে ১৬০০ বছর পর Ming Dynasty এর সময়ে ১৪০০ সালে, কাজ শুরু করার ১৬০০ বছর পর এর কাজ সমাপ্ত হয়। মাঝে বহু রাজা এর সম্প্রসারন করেছে। এত বড় কাজের একমাত্র কারন মানুষের মনে ভয়। চীনের দক্ষিনের লোকেরা উত্তরে যে কোন সময় আক্রমন করে ক্ষতি করে যেত। সেই ক্ষতির ভয়ের কারনেই শত শত বছর ব্যাপি মানব ইতিহাসে সব থেকে বড় কাজ করতে বাধ্য হয় চীনের রাজারা।


চিনের রাজারা দক্ষিনের অসভ্য জাতির হাত থেকে উত্তরের জনগনকে রক্ষার জন্য এত বড় প্রাচীর তৈরি করেছিল। 

কিন্তু বাংলাদেশের জনগন কার ভয়ে, কে কার বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে বেড়া দিচ্ছে? এমন কোন স্থান নেই যেখানে বেড়া নেই। এদেশের সব স্থানেই বেড়া। বেড়াই এদেশের মানুষের ধ্যান জ্ঞ্যান। বাড়ী, গাড়ী, রাস্তা, সিএনজি, স্কুল, কলেজ, কলকারখানা, জেলখানা, সর্বত্রই বেড়া। রাস্তার মাঝখানে বেড়া দিয়ে দিচ্ছে যেন গাড়ী দ্রুত যেতে না পারে। ইদানিং এটিএম মেশিনেও বেড়া দিয়ে দিয়েছে। এটি মহা আবিস্কার। এই বুদ্ধি নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকদের মাথায় এসেছে। 


ফাকা মাঠের মধ্যে জমি কিনে কোন কালে সে জমিতে বাড়ী করবে তার ঠিক নেই কিন্তু জমি কিনেই বেড়া দিচ্ছে, তাও খুব মজবুদ করে। সেই প্রাচীরের উপর আবার কাচের টুকরা দিচ্ছে যেন কেও ভিতরে যেতে না পারে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে কি নিবে? কিছুই তো নেই। তবুও বেড়া। বাড়ী তৈরি করে জানালা, বারান্দা সব খানেই মজবুত রড আর অ্যাংগেল এর বেড়া। গাড়ী কিনে সেখানেও বেড়া লাগানো হচ্ছে, যাকে আমরা বলি বাম্পার। সিএনজি যাত্রীর যেন ছিনতাই না হয় তার জন্য ছিনতাইকারীকে না ধরে সিএনজিতে লাগানো হচ্ছে বেড়া। 


এই রকম সব বেড়াকে যোগ করলে বেড়ার দৈর্ঘ্য কত হবে? আমার বিশ্বাস চিনের মহাপ্রাচীর নিঃসন্দেহে হার মানবে। বাংলাদেশের মানুষের বেড়ার কাছে চীনের বেড়া কিছুই না।

এই ধরনের দৃশ্যমান বেড়া ছাড়াও আরো বেড়া আছে। সেটি অদৃশ্য বেড়া, মানুষে মানুষে বেড়া। এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেড়া। পুলিশ আর জনগনের মধ্যে বেড়া। সাধারন জনগন আর ক্ষমতাশীনদের মধ্যে বেড়া। শিক্ষিত আর অশিক্ষিত, ধনী আর দরিদ্র, মালিক আর শ্রমিকদের মাঝে বেড়া। সরকারী চাকুরীজিবী আর জনগনের মধ্যে বেড়া।


১৯৯৩ এর জানুয়ারীতে প্রথম আমি জাপানে গিয়েছিলাম, এয়ারপোর্টের বাহিরে এসেই একটি বেড়ামুক্ত দেশ দেখেছিলাম। সে দেশের কোথাও কোনো বেড়া নেই। জানালায় রড নেই। চুরি হওয়ার ভয় নেই। সব থেকে বড় কথা মানুষে মানুষে কোন বেড়া নেই। সকলেই সকলের সাথে সহজে মিশতে পারে। মালিক শ্রমিকে নেই কোন ভেদাভেদ।


এদেশের মানুষ সব ছেড়ে দিয়ে আছে বেড়ার পিছনে, এই বেড়ার কারনে কত সম্পদ আর শ্রম নস্ট হচ্ছে তার শেষ নেই। সর্বশেষ বেড়ার সংযোজন হচ্ছে ATM মেশিনে ঢাকনা আর সব অফিস, আদালত, ব্যাংকে Security এর জন্য মেটাল ডিটেক্টর।

Suggested Articles

image