Uttara, Dhaka, Bangladesh

+8801707386530

mail@zcl.com.bd

প্রফেসর ইউনুস যদি নোবেল প্রাইজ না পেতেন, তাহলে একটি ব্যাপার হতো তা হলো নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠতো না বা অন্তর্ভুক্ত হতো না। প্রফেসর ইউনুসের আগে যারা বাঙালি হিসাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তারা কেও-ই বাংলাদেশের নাগরিক না, যেমন রবিঠাকুর, অমর্তসেন। প্রফেসর ইউনুসই বাঙালি আর বাংলাদেশী হিসাবে প্রথম নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

আর একটি ব্যাপার হতো, তা হলো প্রফেসর ইউনুস তার সকল কর্মকান্ডের জন্য সেই ১৯৭৮ হতে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত এত পুরস্কার পেয়েছেন যে, সে যদি নোবেল পুরস্কার না পেত তাহলে নোবেল পুরস্কার এর মর্যাদাই ক্ষুন্ন হতো। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদক দিয়ে শুরু আর ২০১৮ সালে ভারতের উড়িষ্যার অচ্যুত সামন্তের KISS পুরস্কার পেয়েছেন। মাঝে আমেরিকার সর্বোচ্চ যে দুটি পুরস্কার সারা বিশ্বের মাত্র কয়েকজন পেয়েছেন, তার মধ্যে প্রফেসর ইউনুস একজন। বিশ্বের বেশিরভাগ পুরস্কার উনি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন। কমপক্ষে এ পর্যন্ত ৪৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়েছে।


আমি মনে করি প্রফেসর ইউনুস বর্তমানে যে গতিতে সারা বিশ্বের তথা মানব জাতির উন্নয়নে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তার দ্বিতীয়বার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই উজ্জল।


আমরা যে নোবেল পুরস্কারকে এত গুরুত্বপূর্ন মনে করি সেটি আসলে কি? What is Noble Prize and why it is so important? আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, নোবেল পুরস্কারের শুরুই হয়েছে ভুল করে। সুইডেনের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল যে ডিনামাইট আবিস্কার করে খুবই ধনী হয়েছিল, তখন পর্যন্ত তার উদ্ভাবিত ডিনামাইটের প্রধান ব্যবহার ছিল যুদ্ধে মানুষ মারা। ১৮৮৪ সালে ডিনামাইটে তার ছোট ভাই মারা যায়। এর পর আলফ্রেড ডিনামাইটকে আরও নিরাপদ করেন। কিন্তু আরেকটি দূর্ঘটনা ঘটে ১৮৮৮ সালে। তা হচ্ছে নোবেলের বড় ভাই লুডভিগ ফ্রান্সে মারা যান, কিন্তু ফ্রান্সের এক পত্রিকা ভুল করে খবর ছাপে আলফ্রেড নোবেল মারা গেছেন, সাথে তার কুখ্যাত ডিনামাইটের কথাও লিখে, যার মাধ্যমে সে প্রচুর টাকা আয় করলেও সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ হত্যার জন্য তাকে খুব নিন্দা করে।


এই ঘটনাতে নোবেল খুবই দু:ক্ষিত আর প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে সে মৃত্যুর পর সব পেপারে কি লিখবে “Eulogy” তা নিজে লিখে যাবে। তখনই সে সিদ্ধান্ত নেই তার সমস্ত সম্পদ বিশ্বে যারা মানব জাতীর উপকারে কাজ করবে তাদের কে পুরস্কার দিতে ব্যয় করবে। তখন থেকেই শুরু হয়েছে নবেল পুরস্কার।


প্রফেসর ইউনুস এত কাজের মাধ্যমে বিশ্বের অসংখ্য মানুষের জীবন ছুয়েছেন তার শেষ নেই। বর্তমানে তার মুল এজেন্ডা “দারীদ্রমুক্ত বিশ্ব” (Poverty Free World) যা সারা বিশ্বেই সমাদ্রিত। তার সামাজিক ব্যবসাও/Social Business দিনে দিনে সারা বিশ্বে বিপুল জনপ্রীয় হচ্ছে।


আমি অসংখ্য কারনে প্রফেসর ইউনুসকে পছন্দ করি, তার কিছু এখানে সকলের জন্য শেয়ার করি।


তার “Banker to the Poor” বইটি আমি অনেক বার পড়েছি। এ বইয়ের কথা আমি জানতে পারি Readers Digest, ম্যাগাজিনের মাধ্যমে জাপানে থাকতে ১৯৯৮ সালে। বইটি প্রকাশ পাওয়ার পর পরই আমেরিকা আর ইউরোপে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। এই বই হতে বহু কিছু শিখার আছে। বইটির ভূমিকা লিখেছে প্রিন্স চার্লস, তাদের রাজপ্রাদে “ST. JAMES PALACE” বসে। এক পাতা ভূমিকাতে যে এত কথা লিখা যায় তা ঐ ভূমিকা না পড়লে বুঝা যাবে না।


আমি জাপানে থাকতে ১৯৯৬/৯৭ এর দিকে Los Angeles times, এ প্রফেসর ইউনুসের খুব বড় একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছিল, সেখানে একটি প্রশ্নের উত্তরে প্রফেসর ইউনুস বলেছিল, যে জীবনে কখনও ফুটবল খেলা দেখেনি তাকে গ্যালারীতে বসিয়ে দিলে তার খেলা দেখতে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু তাকে যদি বাঁশি হাতে মাঠে নামিয়ে দিয়ে খেলা পরিচালনা করতে বলা তাহলে কেমন হবে? দেখুন আজও যে খেলা দেখেনি জীবনে সে খেলা পরিচালনা করছে বহু স্থানে। যে নিজে কিছু শিখেনি সে দায়িত্ব নিয়েছে শিখাবার।


১৯৯০ এর দিকে দেশের কোন একটি খবরের কাগজে পড়েছিলাম এরকম একটি খবর। রংপুরের একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি প্রফেসর ইউনুসকে বলেছিল বাবা তুমি লোন দিয়ে মানুষকে উপকার করেছো এটা সকলেই জানে। কিন্তু তুমি যে অপর আরেকটি খুব বড় উপকার করেছো মানুষের তা অনেকেই জানে না। সে বলে তুমি যে গরীব মানুষের জন্য ল্যাট্রিন এর ব্যবস্থা করেছো তার দ্বারা মানুষের সব থেকে বেশি উপকার হয়েছে। তিনি বলতে থাকেন, এই টয়লেট চালুর আগে মহিলাদের অমানুষিক কস্ট হতো। সারাদিন তারা অপেক্ষা করত কখন রাত হবে।


তার Banker to the Poor বইয়ে লিখেছেন প্রতিটি সমস্যার একাধিক সমাধান আছে কিন্তু আমরা সহজ সমস্যার জটিল সমাধান খুজি, তার ফলে সমাধানই মূল সমস্যার থেকে আরও জটিল হয়/ Solutions become more complex than the original problems.

Suggested Articles

image