Uttara, Dhaka, Bangladesh
+8801707386530
mail@zcl.com.bd
রবী ঠাকুর বহু আগে তার লিখনী নামক কবিতায় লিখেছিল, "কাজ সে তো মানুষের এ কথা ঠিক, কাজের মানুষ যে জন ধিক তারে ধিক।"
রবী ঠাকুর কাদের কাজ দেখে ক্ষোভে এই কবিতা লিখেছিল আমরা জানিনা, কিন্তু তারা এই বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের মত এত কাজের লোক ছিল কিনা আমার খুবই সন্দেহ। আমাদের দেশটি একেবারে ভরে গিয়েছে কাজের মানুষে। সব স্থানে, সর্বত্র কাজের লোক। সকলেই এদেশে কাজের লোক। ছোট দুধের বাচ্চা বড় হবার আগেই মা বাবা তার কাধে বই এর বোঝা চাপিয়ে কাজের মানুষ বানিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছে। আর যারা স্কুলে যেতে পারছে না, তারা মাঠে ছাগল চরাচ্ছে অথবা বাবা মার কিংবা অন্যের বাড়ীতে কাজের মানুষে পরিনত হচ্ছে।
স্কুলের মাস্টার বাচ্চাদের পড়াতে মহাব্যস্ত হয়ে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের সকল সভ্য দেশে ছয় বছর পর্যন্ত বাচ্চারা শুধু খেলে। অথচ জীবনের শুরুতেই কোন কিছু বুঝার আগেই মাথায় বই এর বোঝা চাপিয়ে সকলেই এদেশে কাজের লোকে পরিনত হচ্ছে। বাড়ীতে এসে খেলাধুলা বন্ধ করে দুধের বাচ্চারা সব পড়া মুখস্থ করছে কোন কিছু না বুঝেই। কোন স্কুলে নেই খাবার ব্যবস্থা, একটি ভাল টয়লেট, একটি খেলার মাঠ, লাইব্রেরী, সুইমিং পুল। আছে শুধুই পড়ার চাপ, কাজ আর কাজ।
সকাল থেকে শুরু করে রাত দুপুর পর্যন্ত এদেশে সকলেই সবখানে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের ঠেলায় রাত বারটায় এদেশে রাস্তায় যানজট হয়। রাত বারটা পর্যন্ত ডাক্তার এদেশে মানুষের রোগ সারে। কোন উন্নত সভ্য দেশেই বিকাল ৫টার পর কোথাও একজন ডাক্তার পাওয়া যায় না। বন্ধের দিন সব হাসপাতাল আর প্রাইভেট চেম্বার সব বন্ধ। আর এদেশে ৫ টার পর থেকেই ডাক্তারদের রোগীদেখা আর চিকিৎসা শুরু হয়। বন্ধের দিনই ডাক্তার আর রোগী সব থেকে বেশি ব্যস্ত।
এদেশের রাজনীতিবিদদের মত এত বড় কাজের রাজনীতিবিদ বিশ্বের আর কোন কেন দেশে নেই, একথা খুব জোর দিয়ে বলা যায়। এত ব্যস্ত রাজনীতিবিদ শুধু এই সোনার বাংলাতেই আছে। সকাল থেকে রাত, পারলে সারারাত তারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য খেটে মরছে। তাদের জীবনে ছুটি বলতে কিছু নেই, রাতদিন আর মাসে ৩০ দিন, বছরে ৩৬৫ দিনই তারা কাজ করে যাচ্ছে। এদেশের রাজনীতিবিদরা হেন কোন কাজ নেই যা তারা করে না। এমন নজির বিশ্বের আর কোন দেশেই নেই। একবার ভোটে জিতে পরের দিন হতেই পরের বার জিতার জন্য খাটতে থাকে।
কোন একটি গ্রাম, পাড়া, মহল্লায় কোন একটি খেলার মাঠ নেই, নেই কোন একটি লাইব্রেরী বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা পার্ক, সারা দেশের কোথাও নেই কোন একটি সুইমিংপুল। প্রতি বছর ১৭-১৮ হাজার লোক সাতার না জানার কারনে ডুবে মারা যায়। দেশের কোন স্কুল, কলেজে নেই একটি ভাল খেলার মাঠ, জিমনেশিয়াম তো দুরের কথা। কোন স্কুলে নেই ছেলেমেয়েদের জন্য টয়লেট। রিপেয়ার বাংলাদেশ নামক একটি সংস্থা চাঁদা তুলে দেশের বহু স্কুল কলেজে টয়লেট বানিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষা বিভাগের লোকের কাজ কি তাহলে?
একটি মানুষের সুস্বাস্থের জন্য কি খেতে হবে দেশের সিংহভাগ লোকই তা জানে না। অশিক্ষিত লোক দূরে থাক, বেশিরভাগ শিক্ষিত লোকই জানে না। দেশের ৮০% জমিতে সারা বছর ৭০/৮০% মানুষ শুধু ধান চাষ করে, শুধুমাত্র ভাত খেয়েই জীবন কাটাচ্ছে। গড়ে এদেশের লোক মোট ক্যালরীর ৮০% গ্রহন করছে ভাত খেয়ে, এই বিষয়টি যে খুব ক্ষতিকর তা কোন লোক জানেও না বা দেশে কেও জানাচ্ছেও না। আফ্রিকার রুয়ান্ডা আর বুরুন্ডী নামক দুটি হতদরীদ্র দেশের লোক ৮২% ক্যালরী শ্বেতসার থেকে গ্রহন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক রোয়ান্ডার লোক বাংলাদেশের থেকে বহু বিষয়ে অগ্রসর (See Internet).
৭০/৮০ লাখ লোক বিদেশে গিয়ে কাজ করছে, দেশে থেকেই লাখ লাখ লোক বিদেশিদের জন্য কাজ করছে গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কারখানায়। ঢাকার আশপাশে সহ সারা দেশে যেখানেই এই কাজের মানুষেরা কাজ করছে সেখানেই নোংরা, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা। তারা কোথায় থাকে, কি খায় তার কোন হদিস নেই। এত ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট, ফিটনেসবিহীন বাস, আদিমকালের ডিজেল ট্রেন কোন দেশে আর তেমন নেই। সিংগেল লাইনের কারনে এক ট্রেন দাড়িয়ে থেকে আরেক ট্রেনকে যেতে দেয়। এত নোংরা রাস্তাঘাট, বাড়ী বাড়ী হাঁসমুরগী, গরু ছাগল পালনও বিশ্বে আর তেমন কোন দেশে নেই। বাড়ী বাড়ী যে এত হাঁসমুরগী আর গরুছাগল পুষছে, তার পরিনাম কি? বছরে মাথাপ্রতি এত কম দুধ, ডিম আর মাংস পৃথিবীর আর কোন দেশের লোক খায়না। যে দেশে এত সহজেই শাকসবজি আর ফলমূল চাষ হয়, সেই দেশের সিংহভাগ লোক (৯০% এর উপরে) তাদের চাহিদামত এসব খেতে পারে না।
এই দেশ যারা চালাচ্ছে বা চালাতে চায় তারা সকলেই কাজের মানুষ। না জেনে না বুঝে সব সময়ই কাজ করে যাচ্ছে। এতই যখন কাজ করছে তাহলে দেশটি এত গরীব কেন? উত্তর হচ্ছে সেই কাজের মানুষ। কাজের মানুষেরা সব সময়ে দরিদ্রই থাকে। কি খেতে হবে জানে না। কি করতে হবে জানে না। কি কাজ কখন কিভাবে করতে হবে জানে না। কারন হচ্ছে সকলেই যে কাজের মানুষ। কাজের মানুষেরা সব সময়ে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কি কাজ করতে হবে তার জন্য। কাজের মানুষেরা নিজে কিছু করে না বা করতে পারে না বা করতে জানে না, কারন তারা যে কাজের মানুষ।
আমাদের এখন দরকার কর্তা বা মালিক, যে কি করতে হবে তা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করবে। এমন লোক দরকার যে কাজ এখন ৫ বছর লাগে সে কাজ ১/২ বছরে শেষ করবে।
২০০০ বছর আগে গ্রীক মনিষী সক্রেটিস বলে গিয়েছেন, Beware of barrenness of busy life. ব্যস্ত জীবনের নিস্ফলতা হতে সকলকে সতর্ক করে গিয়েছেন। সব সময়ে যারা মহাব্যস্ত তাদের দ্বারা ভাল কিছু কখনও হবে না। বহু দেশে প্রতি হাজার লোকের জন্য আছে ৪/৫ জন ডাক্তার, আর এদেশে ৪/৫ হাজার লোকের জন্যও ১ জন ডাক্তার পাওয়া কঠিন। কোনো কোনো জেলাতে লাখ লাখ লোকের জন্যও একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। এত কোটি লোকের দেশে কেবলমাত্র ঢাকাতে ১টি প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি হয়, ভেবে দেখুন ব্যপারটি?? Expert doctor বেশি হলে কার ক্ষতি হবে? যারা Expert doctor তাদের প্রতিদ্বন্দী হবে?
একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কিভাবে দ্রুত উন্নতি হবে, এসব বিষয়ে বিশ্বে বহু গবেষনা হয়েছে, এসবের উত্তর সকলেরই জানা, দরকার শুধু সেসব বাস্তবায়ন করা। এই লাখ লাখ লোকের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য একমাত্র সমাধান শিল্পের প্রসার। দেশে শিল্প বিপ্লব না হলে, কৃষি সহ অন্য কোন খাতেরই উন্নয়ন হবে না। শিল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলে, তাদের হাতে টাকা আসলে, দেশে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফল, সবজি সহ সব পন্যের চাহিদা এত বৃদ্ধি পাবে যে তখন দেশের চাকা সত্যিকারেই ঘুরতে থাকবে।
মাত্র এই ১৯৮০/৯০ সাল পর্যন্ত মালেশিয়ানরা তাদের দেশে শিক্ষার সুযোগ ছিল না বলে বিদেশে পড়েছে। আর এখন অন্য দেশের লোকেরা দলে দলে সে দেশে পড়তে যাচ্ছে। মাত্র ১৫-২০ বছরেই ভিয়েতনামও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সে দেশের সব সড়কই সুন্দর পরিপাটি, দুপাশে ফুলগাছ, সব বাসই এসি, সারা দেশের সব কিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আর আমাদের দেশের কোন কিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না। কারন কি? কারন সব থেকে নোংরা এ দেশের মানুষের মন।
Facebook Page | Privacy Policy | © Zishan Corporation Ltd | Developed by House of Innovation |